প্রবন্ধ
Why the AL Government is so unpopular at present?
অলি আহমদ, বীর বিক্রম
সদস্য, সংসদ
সভাপতি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি
কেন আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমানে এত অজনপ্রিয়?
গত তিন বছরে জনগণের দাবি পূরণে বর্তমান সরকার চরম ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছে। নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো এই ব্যর্থতার প্রমাণ:
- চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র জব্দ,
- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা,
- রমনা বটমূল হামলা,
- বিএডিআর বিক্ষোভের প্রকৃত ঘটনা,
- শাসক দলের ভেতরের কলহ,
- গত ৪০ বছরে অদ্বিতীয় আইনশৃঙ্খলা অবনতি,
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা হারানো,
- সংবিধান সংশোধন,
- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি,
- বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে মারাত্মক সংকট,
- জেল হত্যা মামলা ও মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার,
- শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপরাধ মামলা প্রত্যাহার (প্রেসিডেন্টীয় ক্ষমা ব্যবহার করে দণ্ডিত হত্যাকারীদের রেহাই দেওয়া),
- ভারতকে ঋণ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার ও ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা,
- এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্প নিয়ে অপচেষ্টা,
- নারী নীতিতে দ্বন্দ্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত,
- দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার বানানো ইত্যাদি।
বর্তমান মহাজোট সরকার তাদের তৃতীয় বছর পার করছে এবং তিনটি ‘নিরাশাজনক’ বাজেট ঘোষণা করেছে। তাদের বুঝতে হবে যে এখন জনগণের সমালোচনা মোকাবেলা করতে হবে। তারা জনগণের চাহিদা ও ভাষা বুঝতে হবে। তারা বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবে না। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের মূল লক্ষ্য হলো জাতির ও জনগণের চাহিদা সনাক্ত করা, তার সমাধানের উপযুক্ত পথ খোঁজা ও দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়া।
বর্তমানে দেশ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসবাদী, টোল আদায়কারী, দুর্বৃত্ত, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কবরস্থল হয়ে উঠেছে। তাদের নির্মূল করতে হবে। সরকারের কাজ হলো প্রত্যেক নাগরিকের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গত তিন বছরে সরকার নতুন প্রায় ১৯টি সংকট সৃষ্টি করেছে, যার অধিকাংশ সমাধান বর্তমান মেয়াদে সম্ভব নয় বা প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতিতে সমাধান করা হচ্ছে, যেমন:
- বিএডিআর বিক্ষোভের রহস্য আজো অজানা,
- চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ,
- ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার শুরু হয়নি, সরকার বিরোধী নেতাদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ,
- রমনা বটমূল গ্রেনেড হামলার বিচারও অনুরূপ,
- মুক্তিযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার অগ্রগতি করেছে তবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে,
- সংবিধান সংশোধন: সাম্প্রতিক ১৫তম সংশোধনী বিভ্রান্তিকর ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিরুদ্ধে,
- স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ও ভোট কিনে দেওয়ার বিস্ময়কর ঘটনা,
- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সর্বোচ্চ স্তরে, সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে,
- বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ কমছে,
- শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, কোটি কোটি টাকা লুটপাট,
- বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট অব্যাহত, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে,
- টাকা মূল্যমান কমছে, আমদানি ব্যয় বাড়ছে,
- বেকারত্ব ও প্রবাসী কর্মীর বাজার সংকট,
- বস্ত্র ও টেক্সটাইল শিল্প ধ্বংসের পথে,
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ,
- অতিরিক্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, রাজনৈতিক খুন এবং দলীয় দুষ্কৃতিকারীদের অত্যাচার বাড়ছে,
- মাদকাসক্তি বৃদ্ধি,
- দুর্নীতি, তাণ্ডব ও সরকারি প্রশাসনে nepotism বৃদ্ধি,
- দুর্বল দুর্নীতি দমন কমিশন,
- বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিককরণ ও স্বাধীনতা সংকট,
- পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি,
- বেসামরিক বিমান চলাচলে ক্ষতি,
- পরিবেশের অবনতি ও অবৈধ ইটভাটা, পাহাড় কাটা অব্যাহত,
- সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি,
- বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সমস্যা ও ন্যায়সঙ্গত সম্পর্কের অভাব,
- ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভিশন ২০২১’ কর্মসূচির ব্যর্থতা,
- সরকার বিরোধী দমন-পীড়নে ব্যস্ততা, জনমত ঊর্ধ্বগামী বিরোধী ঐক্যের দিকে যাচ্ছে।
সরকার এখন প্রায় সর্বনিম্ন জনপ্রিয়তায় রয়েছে এবং ক্ষমতা থেকে পতনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয়ে সারসংক্ষেপ
১. মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে।
রাজনৈতিক নেতারা ও তাদের পরিবারের দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে হবে।
২. বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের উপর হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
প্রতিশোধ এবং বিদ্বেষের রাজনীতি বন্ধ করে সবার জন্য সমান রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে হবে।
৩. উচ্চ আদালত পুনর্গঠন এবং প্রশাসন থেকে রাজনীতির প্রভাব মুক্ত করতে হবে।
৪. স্বতন্ত্র ও কার্যকরী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হবে যা সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
৫. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রয়োজন, যাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়।
৬. আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; বর্তমান সরকার তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়মুক্তি দেয়ার বদলে বিরোধীদের ওপর মামলা চালাচ্ছে, যা বন্ধ করতে হবে।
৭. দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, এবং বড় নেতাদের পদ দখল করার অধিকার নয়, যোগ্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতে হবে।
৮. বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে উন্নত করতে হবে, ছোটখাটো বিষয় গুলো মীমাংসা করে দ্বিপাক্ষিক সম্মান বজায় রাখতে হবে।
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিকার
- সন্ত্রাসবাদ নতুন নয়, তবে ২০০১ সালের যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এটি প্রধান হুমকি হয়ে উঠেছে।
- দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদের জড়িত নানা গোষ্ঠী সক্রিয়, যেগুলো সীমান্ত অতিক্রম করে এবং অবৈধ আর্থিক ও অস্ত্রের লেনদেন করে থাকে।
- সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য, যেখানে জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
- বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ও বিস্তার বিভিন্ন কারণে ঘটেছে, যা দেশীয় ও প্রতিবেশী পরিস্থিতির প্রতিফলন।
- সরকার ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সচেতন থাকতে হবে।
- আমেরিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও জনসচেতনতা প্রয়োজন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- উন্নয়নের জন্য সকল রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- দেশের অর্পনীয় চাষযোগ্য জমি রক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন জরুরি।
- প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়াতে হবে।
- উন্নত ও দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।